আমার একটি স্বপ্ন ছিল ভয় ছিল যে আল্লাহর ঘর দেখার আগে মৃত্যু এসে যায় কিনা। আল্লাহ তায়ালার অশেষ করুনা আর দয়া যে আল্লাহ আমাকে ঐ ঘরে হজ্বের সফরে নিয়ে গেছেন। আমি কবুতরকে উড়ে কাবা ঘরের উপড় দিয়ে যেতে দেখেছি কিন্তু বসতে দেখিনি। কাবা ঘরের মসজিদের বিভিন্ন জায়গায় কবুতর থাকে, রাত্রেও উড়তে দেখেছি কিন্তু ঠিক কাবা ঘরের উপর বসতে দেখিনি। এখন কেউ যদি বলেন তিনি বসতে দেখেছেন তাহলে আমি কিভাবে অস্বীকার করব? আমিতো দিনের পর দিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকিনি।
কাবা ঘরের ভিতরের অংশ
অনেক বলেন বিমান উড়ে যায় না কাবা ঘরের উপড় দিয়ে প্রকৃতপক্ষে বিমানকে ঐ পর্যন্ত যেতে হয় না ওদিকে দিয়ে কোন রুট নেই। মক্কাগামী যাত্রীরা জেদ্দা বিমানবন্দরে গিয়ে নামেন। অনেকে বলেন চৌম্বক ক্ষেত্রের কারনে বিমান বা পাখি উড়ে না, চৌম্বক ক্ষেত্র আছে কি নাই তা আমি জানি না। হজ্জ বা উমরাহ করতে গেলে মানুষ এইসব দিকে খেয়াল করে না।
পাখি উড়ে কি উড়ে না এইসব বাদ দিয়ে,
আমাদের যা করা দরকার তা হল ঐ ঘরের বার বার জিয়ারতে যাওয়া, তাওয়াফ করা, সায়ী করা, দোয়া করা, দোয়া কবুলের জায়গা,রহমত বরকতের জায়গা, সমস্থ মুসলমানদের স্বপ্ন থাকে ঐখানে যাওয়ার জন্য সামর্থ্য থাক বা না থাক। যে ঘরকে আল্লাহ বানিয়েছে নবীদের দ্বারা। নবীদের, সাহাবিদের, বিখ্যাত সব বুজর্গরা ঐ ঘরের জেয়ারতে গিয়ে ধন্য হয়েছেন দামী হয়েছেন। যে একবার গেছে সে বার বার যেতে চাইবে আর যে যায়নি সে না বুঝার কারনে সামর্থ্য থাকার পরও গাফিলতি করবে।
এই ঘর আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জন্মের ৪০ দিন আগে ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহা তার ৬০০০০ হাজার সৈন্য এবং প্রচুর হাতিসহ এই কাবা ধ্বংস করার জন্য আসে, পরিনামে সেই তার সৈন্য সহ ধ্বংস হয়ে যায়। পবিত্র কুরআন শরীফ আল্লাহ সুরা ফিলে ঐ বাদশাহর ধ্বংসের কাহিনী বর্ননা করেন….
অনুবাদ : (১) আপনি কি শোনেন নি, আপনার প্রভু হস্তীওয়ালাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছিলেন? (২) তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি? (৩) তিনি তাদের উপরে প্রেরণ করেছিলেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি (৪) যারা তাদের উপরে নিক্ষেপ করেছিল মেটেল পাথরের কংকর (৫) অতঃপর তিনি তাদের করে দেন ভক্ষিত তৃণসদৃশ।
পবিত্র কুরআন শরীফ আল্লাহ বলেন,
” মানুষের এবাদতের জন্য সর্বপ্রথম যেই ঘর নির্দষ্ট করা হয়েছে উহা মক্কা শরীফে অবস্থিত , উহা বড়ই বরকতের স্থান এবং দুনিয়বাসীদের জন্য হেদায়েতের বস্তু।”
রসুলুল্লাহ ( সাঃ) এরশাদ করেন , খুব বেশী বেশী করিয়া বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ কর। এই ঘর দুই বার ধ্বংস হইয়া গিয়াছিল । আবার যখন ধ্বংস হবে তখন উহাকে উঠিয়ে নেয়া হবে ।
ইমাম গাজ্জালী ( রঃ ) হজরত আলী (রাঃ) এর বর্ণনা নকল করেন যে , আল্লাহ্ পাক যখন দুনিয়াকে ধ্বংস করার ইচ্ছে করবেন তখন সর্বপ্রথম কাবা শরীফকে বরবাদ করা হইবে । তারপর বাকী সব ধ্বংস হইয়া যাইবে । কেয়ামতের পূর্বে কাবা শরীফ ধ্বংস হইবে বলিয়া অনেক রেওয়ায়েতে আছে ।
রসুলুল্লাহ ( সাঃ ) বলেন , যেই হাবশী কাবা ঘরের এক একটা ইট ধ্বংস করিবে সে যেন আমার চোখের সামনে ভাসিতেছে । হুজুর ( ছঃ ) আবারও বলেন মানুষ যতদিন বায়তুল্লাহর হক অনুসারে এই ঘরের তাজীম করিবে – সুখ শান্তিতে থাকিবে , আর যখন উহার সম্মান ছাড়িয়া দিবে ধ্বংস হইয়া যাইবে।
অন্য হাদীছে আছে , হাজারে আছওয়াদ এবং মাকামে ইব্রাহীম না উঠাইয়া নেওয়া পর্যন্ত কেয়ামত কায়েম হইবে না ।
হজরত জাবের ( রাঃ ) হইতে বর্ণিত , হুজুর ( ছঃ ) ফরমাইয়াছেন , কাবা শরিফের একটি জবান এবং দুইটি ঠোট আছে , পূর্বেকার জমানায় সে আল্লাহর দরবারে অভিযােগ করিল যে , হে আল্লাহ ! আমার জেয়ারত বহুত কম সংখ্যক লোক করিতেছে এবং আমার দিকে লােকজন কম আসিতেছে । আল্লাহ পাক উত্তর করিলেন , আমি এমন এক জাতি তৈয়ার করিতেছি যাহারা খুব খুশুর সহিত বেশী বেশী করিয়া নামাজ পড়িবে এবং তােমার দিকে এমনভাবে ঝুঁকিবে যেমন কবুতর আপন ডিমের দিকে ঝুঁকে । অন্য হাদীছে আসিয়াছে , হাজারে আছওয়াদ এবং রােকনে ইয়ামানী কেয়ামতের দিন এমনভাবে আসিবে যে , তাহাদের দুইটি করিয়া জবান ও ঠোট হইবে । যাহারা যাহাকে চুম্বন কয়ািছে , তাহারা আল্লাহর সহিত কৃত অঙ্গীকার রক্ষা করিয়াছে বলিয়া সাক্ষী দিবে ।
বি.দ্রঃ কাবা শরিফে প্রত্যেকটি নেক আমলের বদলা আল্লাহ ১ লক্ষ গুন দেন। কাবা শরিফের মসজিদে ১ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বাহিরের সাধারণ মসজিদে ১ লক্ষ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সমান। বাহিরের ১ লক্ষ রোজা কাবা শরিফের ১ রোজার সমান। ঠিক এরকম গুনাহেরও একই বিনিময়, আমি আমাদের বাংলাদেশীসহ অনেক মানুষকে দেখেছি কাবাঘরের সামনে দাড়িয়ে সেলফি তুলে, হারাম কাজ।একান্ত প্রয়োজন না হলে ছবি তুলা গুনাহ, আমাদের অবস্থা এখন এতই খারাপের দিকে গেছে যে এইসব গুনাহকে গুনাহ মনে করতে কষ্ট হয়। ঠিক একইভাবে আমি কিছু মানুষকে দেখেছি আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর রওজা মোবারক এর সামনে দাড়িয়ে ছবি তুলতে। যেখানে আগের জামানার মানুষ নবীর কবরের সামনে গিয়ে বেহুশ হয়ে যেতেন আবেগ ভালোবাসায়, সেখানে আমরা গিয়ে ছবি তুলি। অথচ নবী কবরে জিন্দা, তার কবরের সামনে গেলে তিনি দেখেন ও কথা শুনেন, আমাদের খবরই নেই আমরা কার কবরের সামনে গিয়ে দাড়িয়েছি।
আগের জামানার মানুষ ঐ পবিত্র জায়গা থেকে রহমত, বরকত ও ক্ষমা নিয়ে আসতেন আর আমরা নিজেদের দোষে গুনাহ নিয়ে আসি।
রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কবর দেখিয়া এক মহিলার মৃত্যু
হযরত আ’য়েশাহ রদিয়াল্লহু আ’নহা এর নিকট এক মহিলা আসিয়া বলিলেন, আমাকে রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কবর যিয়ারত করাইয়া দিন। হযরত আ’য়েশাহ রদিয়াল্লহু আ’নহা হুজরা শরীফ খুলিলেন। তিনি যিয়ারত করিলেন এবং যিয়ারত করিয়া কাঁদিতে লাগিলেন এবং কাঁদিতে কাঁদিতে মৃত্যুবরণ করিলেন। (শিফা)
এমন এশক ও মুহাব্বাতের নজীর কি কোথাও মিলিবে? কবর যিয়ারতও সহ্য করিতে পারিল না এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করিল।
মন্তব্য করুন