নিজস্ব প্রতিবেদক : ইশতেয়াক হোসেনের বাড়ি পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মিরের দড়ার বাজারে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে অবস্থান করলেও ঠিকমত বাংলা বলতে পারেন না। সিলেটে কাজের সুবাদে ২০১৩ সালে বিয়ে করেন কানাইঘাট গাছবাড়ি নয়া গ্রামের বাসিন্দা নাজিরা বেগমকে। ইশতেয়াক ও নাজিরা দম্পতি সিলেট নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ড এলাকায় এখন আতঙ্কের নাম। ইতোমধ্যে তারা বিষিয়ে তুলেছেন নগরীর কয়েকটি এলাকা। তাদের পেছনে রয়েছে একটি চক্র। সেই চক্রের ইন্ধনে ইশতেয়াক-নাজেরা দম্পতি মানুষকে জিম্মি করে দাবি করেন মোটা অংকের টাকা। দাবিকৃত টাকা না দিলে ভয়-ভীতি দেখান মামলার। আশ্রয় নেন নানা কৌশলের।
কৌশলের অংশ হিসেবে ইশতেয়াক-নাজেরা দম্পতি প্রথমে নেন বাসা ভাড়া। এরপর বাসা ভাড়া পরিশোধ না করে বাসা দখলে রেখে নানা নাটক রচনা করেন। ভাড়া তো দেনই না বাসা ছাড়তে বললেও ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। এরপর তাগাদা দিলে আনা হয় শ্লীলতাহানির অভিযোগ। এমনকি তা থানা পর্যন্ত গড়ায়। এই দম্পতির বেপরোয়া আচরণে সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।
ইশতেয়াক ও নাজিরা দম্পতির অসহায়ত্বের গল্প শুনে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাড়া নেয়া পূর্ব শাহী ঈদগাহস্থ এলাকার অনামিকা ৫৪/এ বাসার একটি অংশ তাদেরকে ভাড়া দিয়েছিলেন সিলেটের ব্যবসায়ী মাসুমুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। বাসা ভাড়া চাইতে গিয়ে তাকে মামলার আসামী হতে হয়। শুধু মামলা নয় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে থানায় সাধারণ ডায়রিও করা হয়। পুলিশের তদন্তে সেই সাধরণ ডায়রি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) আশরাফ উল্ল্যাহ বলেন, শাহী ঈদগাহ এলাকায় থাকা পাকিস্তানী নাগরিক ইশতেয়াক হোসেনকে নিয়ে পুলিশের একটি দল কাজ করে যাচ্ছে। তার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুলিশ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইশতেয়াক হোসেন বাংলাদেশি নাগরিক নন। তিনি পাকিস্তানের বাসিন্দা। প্রথম বিয়ে করার পর স্ত্রীর মৃত্যু হওয়ায় তিনি কানাইঘাট গাছাবাড়ি এলাকার নাজিরা বেগমকে বিয়ে করেন। নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে ইশতেয়াক তার স্ত্রীকে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। তার স্ত্রীর উগ্র আচরণে ভয় পেয়ে অনেকেই তাদের বিষয়ে কথা বলতে সাহস পান না। মান সম্মানের ভয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ এলাকার সালিশ ব্যক্তিত্বরাও চুপসে গেছেন উগ্র আচরণে।
ব্যবসায়ী মাসুম রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ নানা ষড়যন্ত্র চলছে। আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়েও হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পূর্বে তদন্ত হয়নি। মানবিকতা দেখানোর কারণেই আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি যদি খারাপ হতাম তাহলে এলাকার মানুষ আমার পক্ষে থাকতেন না। আমার এলাকার গণমাণ্য ব্যক্তিদের সাথে উগ্র ও অশ্লীল ভাষায় কথা বলে নাজিরা ও তার স্বামী।
১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম শওকত আমীন তৌহিদ বলেন, ইশতেয়াক ও নাজিরা বেগমকে অসহায় দেখে আমার ওয়ার্ডের আওতাধীন কয়েকটি এলাকার কয়েকজন তাদেরকে বাসা ভাড়া দিয়ে বিপদে পড়েন। এই দুজন মানুষের কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যতটুকু খবর নিয়েছি এবং জেনেছি ইশতেয়াক বাংলাদেশের নাগরিক নন। তার জন্মস্থান পাকিস্তানের কাশ্মিরে। সিলেটের কানাইঘাটে বিয়ে করার সুবাদে তিনি সিলেটে বসবাস করে আসছেন। তিনি কোন ওয়ার্ডেরও স্থানীয় বাসিন্দা নন। তাদের অপকর্মের কোতোয়ালি থানা পুলিশও অবগত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাদের আচার-আচারণ এতটাই খারাপ যে, তাদের সাথে কথা বলতে কারও সাহস হয় না।
এ বিষয়ে নাজিরা বেগম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেগুলো সত্য নয়। আমাদেরকে ওই বাসায় ফ্রি’তে থাকতে দেয়া হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেন, তার স্বামী ইশতেয়াক হোসেন পাকিস্তানের কাশ্মিরের নাগরিক। ২০১৩ সালে তাদের বিয়ে হয়। ইশতেয়াক সিএনজি গ্যাস পাম্পে কাজ করেন। তিনি প্রায় ১৫ বছর থেকে সিলেটে অবস্থান করছেন।
ইশতেয়াক হোসেন নিজেকে বাংলাদেশি দাবি করে বলেন, আমার কাছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট রয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি আমি পাকিস্তানেরও নাগরিক। আমার বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে আমি এসব বিষয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনারে কাছে অভিযোগ দিয়েছি। এখন বিষয়টি তারা দেখবেন।
পূর্ব শাহী ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলাম এহিয়া বলেন, ইশতেয়াক ও নাজিরা বেগমের অবস্থা দেখে মানবিক কারণে মাসুম নামের এক ব্যবসায়ী তার ভাড়া নেয়া বাসা ভাড়া দিয়ে তিনি মহা সমস্যায় পড়েছেন। ওই দম্পতি ভাড়াতো ১বছর থেকে দিচ্ছেনা বরং তার উপর হামলার অভিযোগ এনে কোতোয়ালি থানায় একটি সাজানো মামলা দায়ের করেছে।
তিনি আরও বলেন, এসব বিষয়ে আমরা স্থানীয় কয়েকজন মিলে ইশতেয়াক ও নাজিরা বেগমের কাছে গিয়ে বাসা ছাড়ার অনুরোধ করে লাভ হয়নি। তাদের আচরণ এতটাই খারাপ তার সাথে আর কেউ কোন কথা বলতে রাজি হননি। এককথায় তার সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রী খুবই উগ্র। ইশতেয়াক পাকিস্তানের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন থেকে সে সিলেটে বসবাস করে আসছে।
মন্তব্য করুন