বৃহস্পতিবার , ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
শিরোনাম
bgadminp
১৬ মে ২০২১, ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

করোনা-বিজয়ের অনুভূতি মিলিয়ন মৃত্যুর কারণ হতে পারে

বিশ্বে বর্তমানে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫৫ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে; মৃত্যুর সংখ্যা তিন মিলিয়নেরও বেশি। এ টুকরো লেখার কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে অথবা এটি প্রকাশিত হওয়ার আগে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা উভয়েই জ্যামিতিকভাবে বাড়তে থাকবে। প্রতিদিন এখন গড়ে কোভিড রোগীর সংখ্যা আট লাখের চেয়েও বেশি। মৃত্যু ও রোগীর সংখ্যার বাইরেও কোভিড তৈরি করেছে শতসহস্র কোটি বেদনাদায়ক গল্প। মৃত্যু যখন এত বেশি, সংখ্যা যখন সব ছাড়িয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে, দুঃখের গল্প বোঝা বা শোনার সময় কোথায়! আধুনিক সমাজের জ্ঞাত ইতিহাসে অন্য কোনো ইভেন্ট এত বেশি মানুষকে প্রভাবিত করতে পারেনি এবং দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এখন পর্যন্ত জানি না, কখন এই ধ্বংসাত্মক মহামারি শেষ হবে।

করোনাভাইরাস মহামারি উন্নত দেশগুলোকেও ছাড়েনি; যদিও গবেষণা দেখায় যে এটি বিশ্বজুড়ে দরিদ্র ও সংখ্যালঘু লোকদের হত্যা করেছে বেশি। এমনকি উন্নত স্বাস্থ্যসেবার দেশগুলোও, যেমন কানাডাও, এ সমস্যা থেকে বাঁচতে হিমশিম খাচ্ছে। ভাইরাস আক্রমণের এক বছর পরেও উন্নত দেশগুলো এ ধরনের নজিরবিহীন, দীর্ঘায়িত সংকট মোকাবিলায় বিপুল সতর্কতা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বজুড়ে চিকিত্সাবিজ্ঞানীদের দ্বারা অসাধারণ কাজ এবং অগ্রগতি সত্ত্বেও কোভিড নিয়ে এখনো আমরা তেমন কিছু জানি না। বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন, ভাইরাসটি খুব তাড়াতাড়ি যাচ্ছে না, যদিও–বা কখনো যায়। কেন এ সংকট বিশ্বজুড়ে এমন নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করেছে এর অনেক কারণ থাকতে পারে—এ লেখার কাজ সেই দিকটিতে আলোকপাত করা নয়।
তবু যে বিষয়টি অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত, তা হলো বিশ্বের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে নেতৃত্বের ব্যর্থতা সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যদিও আমি এ অংশে এদিক তুলে ধরার ইচ্ছা নেই, প্রশ্ন হলো—আমেরিকা, ব্রাজিল এবং ভারত—এই তিনটি দেশে কোভিডের রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যার সবচেয়ে বেশি কেন? এই দেশগুলোর সরকারপ্রধান জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। তিন প্রধানই—ডোনাল্ড ট্রাম্প, জইর বলসোনারো ও নরেন্দ্র মোদি—প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তাঁরা এই মারাত্মক ভাইরাস নিয়েও একই কাজ করেছেন। ফলাফল খুবই প্রত্যাশিত! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে খারাপ-সংক্রামিত দেশ হিসেবে ব্রাজিলকে এখন ছাড়িয়ে যাচ্ছে ভারত।

ভারত এ সংকটের সর্বশেষতম কেন্দ্র। ভারতে চলছে এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ প্রাদুর্ভাব। তথাকথিত প্রথম করোনাভাইরাস তরঙ্গ পরে, বাংলাদেশের মতোই ভারত ভেবেছিল তারা ভাইরাসকে জয় করেছে ফেলেছে। এই আত্মতৃপ্তি দেখে আমি গভীরভাবে হতবাক হয়েছি। আমি এ নিয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস কোভিড-১৯ ব্লগে প্রকাশিত এক টুকরো লেখায় ভারত ও বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেছিলাম, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এত তাড়াতাড়ি জয় ঘোষণা করা খুবই অপ্রত্যাশিত ও বিপজ্জনক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটি নতুন ফর্মে রূপান্তরিত হয়। ভারতে ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ সংকটের ব্রেকিং পয়েন্ট অতিক্রম করেছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পোড়ানো দেখে এখন মনে হচ্ছে ভারতে মৃত্যুই এখন একমাত্র সত্য। বিশ্ব লাখ লাখ টাকা সাহায্য পাঠানো সত্ত্বেও ভারত এ সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। একটি হাজার হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এক ঘণ্টার মধ্যে কোভিডে রোগীতে পূর্ণ হচ্ছে।
বাংলাদেশকে অবশ্য এখনো ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তবে এটি যেকোনো সময়েই বদলে যেতে পারে। জনসংখ্যার আকারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভারত বাংলাদেশ থেকে পৃথক। তাই কি? বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে একটি খুব ছোট দেশ যেখানে ১৭ কোটিরও বেশি লোক রয়েছে—প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় দেড় হাজার লোক। ঘনবসতির দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর নবম বা দশম স্থানে আছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মূল রক্ষক, বাংলাদেশে প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে। বিপর্যয় তাই কেবল সময়ের ব্যাপার। ভারতে যা ঘটেছিল, তা বাংলাদেশে ঘটে গেলে পরিস্থিতি বরং আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোতে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে উন্নত নয়। জাতির সক্ষমতা নিয়ে অহেতুক বড়াই করার সঠিক সময় নয় এটি।
এটাও উল্লেখ করা দরকার, এখন সময় এসেছে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা—এসব ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো শনাক্ত করা এবং এ খাতগুলো উন্নত করার দিকে কাজ মনোযোগ দেওয়া উচিত। এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—১. এ ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দেশব্যাপী প্রচারণা চালানো; ২. স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সমস্ত নির্দেশিকা মানতে মানুষকে প্রেরণা দেওয়া এবং ৩. টিকা দেওয়ার জন্য জনগণকে উৎসাহ দেওয়া। এ কাজগুলো বাংলাদেশে করা সহজ নয় এবং এগুলো শুরুতে অকার্যকর বলে মনে হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে এগুলো করতে পারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

এই ভাইরাস বিপজ্জনক, কম করে বলতে গেলে। করোনাভাইরাসের টিকাগুলোও এখনো শতভাগ কার্যকর নয়; এমন কিছু লোক আছেন, যাঁরা টিকা দেওয়ার পরেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব অবশ্যই বাংলাদেশের সরকারের ওপর। বাংলাদেশের জনগণের জন্য সরকার কী করতে সক্ষম, তা অবশ্যই করে দেখাতে হবে। এ সর্বনাশ থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে সরকারের উচিত তার সমস্ত শাখা এবং সংস্থান ব্যবহার করা। বাংলাদেশি জনগণ এবং বিশ্ব কীভাবে বর্তমান সরকারকে স্মরণ করবে, তা মূলত নির্ভর করছে সরকার কীভাবে এই মহামারি মোকাবিলা করছে তার ওপর।

লেখক: নিখিল দেব, সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, মারি স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ময়মনসিংহে মানহানির ২ মামলায় অব্যাহতি পেলেন তারেক রহমান

মিরপুরে যৌথবাহিনীর সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষ, আসামি সহস্রাধিক

পদত্যাগের ঘোষণা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের

পর্যটনে বাংলাদেশ-নেপাল-মালদ্বীপের মধ্যে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

গ্রীণ অরণ্য পার্কে ট্যুরিস্ট পুলিশের মতবিনিময় সভা

ময়মনসিংহে অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ট্যুরিস্ট পুলিশের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝি ও ট্যুরিস্ট পুলিশ এর কমিউনিটিং ও মতবিনিময় সভা

শিক্ষকের ওপর ছাত্ররা অসন্তোষ কেন, তদন্ত হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

শেরপুরে তুলসীমালা ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

ভালুকায় ট্রাকচাপায় অটোরিকশার চালকসহ ৩ যাত্রী নিহত

১০

ময়মনসিংহ মেডিকেলে তৃতীয়বারের মতো চালু হলো ক্যাথল্যাব

১১

গৌরীপুরে মাইকিং করে পুলিশের ওপর হামলা, আহত ৬

১২

জামালপুরে যমুনার তীর সংরক্ষণ বাঁধে ধস

১৩

ময়মনসিংহে ইট ভাটায় ৮ লাখ টাকা জরিমানা

১৪

ময়মনসিংহে শান্ত হত্যাকান্ডের মুলহোতাসহ তিনজনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার

১৫

টাঙ্গাইলে নেশার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মেরে ফেললেন স্বামী

১৬

মদনে ফসল হারিয়ে কাঁদছেন কৃষক-কৃষাণী

১৭

গৌরীপুরের শতবর্ষী গোলপুকুরের যৌবন হারাচ্ছে

১৮

মসজিদুল আকসায় তুর্কি শেফ বোরাকের জুমা আদায়

১৯

সরকার বিরোধীদলকে নির্মূল করার চেষ্টায় লিপ্ত : মির্জা ফখরুল

২০