নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের অতিদ্রুত সাজা দিতে সরকার সেল গঠন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সেই ২০১৩ সালের একটি মামলা মুগদা থানার। এটা মিথ্যা গায়েবী মামলা।
এখন একজন মানুষকে একই ঘটনায় দুইটা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মুগদা থানার বিস্ফোরক মামলায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এখানে ৩২ জন খালাস পেয়েছেন আর সাতজনকে দুই বছর তিন মাস/ দুই বছর এক মাস… এভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। এটা এখন সারা দেশেই কিন্তু চলছে। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শুনেছি যে, তালিকা তৈরি করেছে সরকার। সেই তালিকা ধরে বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে এই মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য একটা সেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, এই সেল তৈরি করে দিয়ে অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ‘
বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর প্রমাণ হচ্ছে এই মুগদা থানার মামলাটা। যেখানে কোনো কিছু নাই, নাথিং। আমার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সেই মামলাগুলোতে কী আছে? ফখরুল বলেন, এই ছলচাতুরী, প্রতারণা করে গোটা জাতিকে একটা ভয়াবহ অন্ধকার গহ্বরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এটার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার বিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে কাজ করছে। যেটাকে আমরা বলি পাঞ্চ করা, পানজিং অব দ্য অপজিশন। পাকিস্তান আমলে আমাদের এই বাংলাদেশে একটা জাতিকে নির্মূল করার জন্য যেমন আপনার নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যা সব কিছু চালানো হয়েছিল, পোড়ামাটির একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, আজকে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকে বিরোধী দলকে নির্মূল করার জন্য সেই একই অভিযান চালানো হচ্ছে। ‘
তিনি বলেন, ‘যখনই বিরোধী দল কর্মসূচি নিয়ে মাঠে এসেছে তাদেরকে একইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে দেখেছেন বাম জোট যে কর্মসূচিতে দিয়েছিল, সেখানেও একইভাবে তারা মামলা দিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে, মারপিট করেছে। গত ৬ তারিখে ইশরাক দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে মতিঝিলে লিফলেট বিতরণ করছিলেন। সেই সময়ে তাকে বিনা উ সকানিতে গ্রেপ্তার করা হয়, সেখানে অনেককে মারধর করা হয়, লাঠিচার্জ করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে যখন আদালতে নিয়ে আসা হয় সেখানেও বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ করা হয়, নির্যাতন করা হয়। ‘
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন নাটক করেই যাচ্ছে। সিভিল সোসাইটিকে ডাকছে, সাংবাদিকদের ডাকছে। তাদেরকে ডেকে খুব সুন্দর কথা বলছেন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার যিনি উনি সুন্দর বাংলা বলেন। কথা বলার ভঙ্গিও সুন্দর। আগের ভদ্রলোক তো ছিলেন যে কথাই ভিন্নভাবে বলতেন। এখনকার জন চমৎকার কথা বলেন এবং বলে মানুষকে বিমোহিত করার চেষ্টাও তিনি করেন। ‘
ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে মামলা এটা কোনো মামলা না, এটার মধ্যে কিছুই নেই। সমস্ত মিথ্যা কথা দিয়ে সাজানো মামলা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। এই নেত্রী, যিনি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করলেন, সংগ্রাম করলেন, তাকে এভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া, এর জন্য সরকারকে দায়ী থাকতে হবে, গণতন্ত্র হত্যার জন্য তাদেরকে দায়ী থাকতে হবে। ‘
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, এসকে সেকান্দার, হারুনুর রশীদ, মুনির হোসেন চেয়ারম্যান, আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান ফয়েজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন