শেরপুর সংবাদদাতা:কৃষি ও খাদ্য সমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরে এবার সুগন্ধি জাতের তুলসীমালা ও চিনিগুঁড়া ধান চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এসব ধান চাষে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলসীমালার সুগন্ধে’ জেলা ব্র্যান্ডিং স্লোগানের এ তুলসীমালা ধানকে শেরপুর জেলার জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করতেও চলছে প্রয়াস। যে কারণে তুলসীমালা ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে শেরপুরের উৎপাদিত তুলসীমালা চালের। কৃষক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তুলসীমালা ও চিনিগুঁড়া চাল চিকন ও সুস্বাদু। এ চালে পোলাও, বিরিয়ানি, পায়েশ, খিচুড়ি, পিঠাসহ অন্যান্য খাবার তৈরি হয়। শেরপুর জেলা ব্র্যান্ডিংয়েও স্থান পেয়েছে তুলসীমালা ধান।
কৃষকরা বলছেন, এ বছর অনুকূল আবহাওয়া এবং ক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় অল্প খরচেই তারা ফলন ঘরে তুলতে পেরেছেন। এক একর জমিতে তুলসীমালা কিংবা চিনিগুঁড়া সুগন্ধি ধান চাষ করতে কাটা-মাড়াইসহ খরচ পড়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর ধান পাওয়া গেছে ৩৫ থেকে ৪০ মণ করে। এতে একরপ্রতি খরচ বাদেও লাভ হয়েছে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ১৪ হেক্টর জমিতে তুলসীমালা ধানের আবাদ হয়েছে। আর তাতে উৎপাদন হয়েছে ১৯ হাজার ৪৬২ মেট্রিক টন চাল। তা ছাড়া ৬ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে চিনিগুঁড়া জাতের ধান আবাদ হয়েছে। তাতে ফলন হয়েছে ১১ হাজার ৩২ মেট্রিক টন চাল। শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলায় এসব সুগন্ধি জাতের ধানের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে এক মণ তুলসীমালা ও চিনিগুঁড়া ধান ১ হাজার ৮শ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলার রূপনারায়নকুড়া ইউনিয়নের কৃষক মোঃ হাবিব জানান, তিনি এক একর জমিতে তুলসীমালা ধান আবাদ করে ৪০ মণ ফলন পেয়েছেন। ধান চাষে তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আর কাঁচা অবস্থায় সেই ধান ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার খরচ বাদেও প্রায় ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে বলে জানান। কয়েক বছর ধরেই তিনি তুলসীমালা ধান আবাদ করছেন বলেও জানান।
কোন্নগড় গ্রামের কৃষক শ্রাবণ মিয়া বলেন, বাজারে তুলসীমালা ও চিনিগুঁড়া ধানের চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাওয়া যায়। এ জন্য কয়েক বছর ধরেই তিনি তার ৩ একর জমিতে এসব ধানের আবাদ করছেন। এবার পোকামাকড় কিংবা খরা কিংবা ঝড়-বৃষ্টি না থাকায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
জেলা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বাসসকে বলেন, তুলসীমালা ও চিনিগুঁড়া ধানের চাল সুগন্ধি, চিকন ও সুস্বাদু। ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে এসব সুগন্ধি চালের আলাদা কদর রয়েছে। শীতকালে বিয়েশাদিসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান থাকায় এ চালের চাহিদা বাজারে এখন অনেক। শেরপুর জেলাকে পর্যটনের আনন্দে, তুলশীমালার সুগন্ধে, স্লোগানে ব্র্যান্ডিং থাকায় দেশ বিদেশের প্রচুর সংখ্যক ফেসবুক গ্রাহক তুলশীমালা ও পর্যটন সম্পর্কে জানতে শেরপুরের খামারবাড়ী ফেসবুক পেইজটি ফলো করছেন।
মন্তব্য করুন